রেচন প্রক্রিয়া (অষ্টম অধ্যায়)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - জীববিজ্ঞান (নতুন সংস্করণ) - | NCTB BOOK
596
596
শরীরের ভিতরে প্রতিস্থাপনের উপযোগী কিডনি আবিষ্কার করেছেন
বাংলাদেশের বিজ্ঞানি ড. শুভ রায়

জীবদেহে কোষের ভিতরে অসংখ্য রাসায়নিক ক্রিয়া ঘটে। এতে জীবদেহের শারীরবৃত্তীয় কাজগুলো সুচারুরূপে সম্পাদিত হয়, জীব বেঁচে থাকে। রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন কিছু পদার্থ দেহের জন্য অপরিহার্য আবার কিছু পদার্থ দেহের জন্য ক্ষতিকর। এই ক্ষতিকর পদার্থগুলো দেহ থেকে বের করে দেওয়া খুবই জরুরি। যেমন শ্বসনের সময় গ্লুকোজ ভেঙে কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়, রক্ত এই কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবহন করে ফুসফুসে নিয়ে যায় এবং ফুসফুস থেকে দেহের বাইরে নির্গত হয়। একইভাবে বৃক্ক বা কিডনি নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য ও অতিরিক্ত অন্ন শরীর থেকে বের করে দেয়।
এ অধ্যায়ে দেহ থেকে বৃক্ক কর্তৃক ঘটিত বিভিন্ন ধরনের বর্জ্যপদার্থ নিষ্কাশন এবং বৃক্কের নানা রোপ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা


• মানুষের রেচন ব্যাখ্যা করতে পারব
• মানবদেহে উৎপন্ন রেচন পদার্থের বর্ণনা করতে পারব
• বৃক্কের গঠন ও কাজ বর্ণনা করতে পারব
• নেফ্রনের গঠন ও কাজ বর্ণনা করতে পারব
• অসমোরেগুলেশনে বৃক্কের ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে পারব
বৃক্কে পাথর সৃষ্টি প্রতিরোধ এবং প্রতিকার বর্ণনা করতে পারব
• বৃক্ক বিকলের লক্ষণ ও করণীয় বর্ণনা করতে পারব
• বৃক্কের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে ডায়ালাইসিসের ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে পারব
• বৃক্ক প্রতিস্থাপন এবং মরণোত্তর বৃক্কদানের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব
• মূত্রনালির রোগ ও সুস্থ থাকার উপায় বর্ণনা করতে পারব
• মরণোত্তর বৃক্কদান বিষয়ে জনমত নিরুপণের একটি অনুসন্ধান কাজ করতে পারব
•মানববৃক্ক ও নেফ্রনের চিত্র অঙ্কন করে চিহ্নিত করতে পারব
•সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির জন্য মরণোত্তর বৃক্ক দান বিষয়ে পোস্টার অঙ্কন করতে পারব
•বৃক্ক ও মূত্রনালির সুস্থতা রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টি করতে লিফলেট অঙ্কন করতে পারব
• বৃক্ক ও মূত্রনালির সুস্থতায় সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারব
• মরণোত্তর বৃক্কদান বিষয়েসামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারব।

common.content_added_and_updated_by

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

অম্লীয় মূত্র
ক্ষারীয় মূত্র
স্বাভাবিক মূত্র
ঈষৎ অম্লীয় মূত্র
রেনালটিউব্যুল
বোম্যান্স ক্যাপসুল
রেনাল করপাসল
সংগ্রাহক নালিকা

রেচন (8.1)

194
194
চিত্র 8.01: মানব রেচনতন্ত্র

রেচন মানবদেহের একটি জৈবিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে দেহে বিপাক প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থগুলো বের করে দেওয়া হয়। দেহের এই বর্জ্য পদার্থগুলো শরীরে কোনো কারণে জমতে থাকলে নানা রকমের অসুখ দেখা দেয়, পরবর্তীতে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। যে তন্ত্রের মাধ্যমে দেহের বিষাক্ত পদার্থ নিষ্কাশিত হয়, ডাকে রেচনতন্ত্র বলে। শরীরের অতিরিক্ত পানি, লবণ এবং জৈব পদার্থগুলো সাধারণত রেচনের মাধ্যমে দেহ থেকে বের করে দিয়ে বৃক্ক দেহের শারীরবৃত্তীয় ভারসাম্য রক্ষা করে। মানবদেহের রেচন অঙ্গ হলো কিডনি অথবা বৃদ্ধ। আর বৃক্কের একক হলো নেফ্রন।

রেচন পদার্থ
রেচন পদার্থ বলতে মূলত নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য পদার্থকে বোঝায়। মানবদেহের রেচন পদার্থ মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে আসে। স্বাভাবিক মুত্রের ভর হিসেবে প্রায় 95% হলো পানি। অন্যান্য উপাদানের মধ্যে আছে ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, ক্রিয়েটিনিন ও বিভিন্ন ধরনের লবণ। ইউরোক্রোম নামে এক ধরনের রঞ্জক পদার্থের উপস্থিতিতে সূত্রের রং হালকা হলুদ হয়। আমিষ-জাতীয় খাদ্য খেলে মূত্রের অন্নতা বৃদ্ধি পায় আবার ফলমূল এবং তরিতরকারি খেলে সাধারণত ক্ষারীয় মূত্র তৈরি হয়।

common.content_added_by

বৃক্ক (Kidney) (8.2)

461
461

মানবদেহের উদরগহ্বরের পিছনের অংশে, মেরুদন্ডের দুদিকে বক্ষপিঞ্জরের নিচে পিঠ-সংলগ্ন অবস্থায় দুটি বৃক্ক অবস্থান করে। প্রতিটি বৃক্ক দেখতে শিমবিচির মতো এবং এর রং লালচে হয়। বৃক্কের বাইরের পার্শ্ব উত্তল এবং ভিতরের পার্শ্ব অবতল হয়। অবতল অংশের ভাঁজকে হাইলাস (Hilus) বা হাইলাম বলে। হাইলামের ভিতর থেকে ইউরেটার এবং রেনাল শিরা বের হয় এবং রেনাল ধমনি বৃক্কে প্রবেশ করে। দুটি বৃক্ক থেকে দুটি ইউরেটার বের হয়ে মুত্রাশয়ে প্রবেশ করে। ইউরেটারের ফানেল আকৃতির প্রশস্ত অংশকে রেনাল পেলভিস বলে।
বৃক্ক সম্পূর্ণরূপে এক ধরনের তক্ষুময় আবরণ দিয়ে বেন্টিত থাকে, একে রেনাল ক্যাপসুল বলে।

চিত্র ৪.02: বৃক্কের লম্বচ্ছেদ

ক্যাপসুল-সংলগ্ন অংশকে কর্টেক্স এবং ভিতরের অংশকে মেডুলা বলে। উভয় অঞ্চলই যোজক কলা এবং রক্তবাহী নালি দিয়ে গঠিত। মেডুলায় সাধারণত ৪-12টি রেনাল পিরামিড থাকে। এদের অগ্রভাগ প্রসারিত হয়ে রেনাল প্যাপিলা (Papilla) গঠন করে। এসব প্যাপিলা সরাসরি পেলভিসে উন্মুক্ত হয়।
প্রতিটি বৃক্কে বিশেষ এক ধরনের নালিকা থাকে, যাকে ইউরিনিফেরাস নালিকা বলে। প্রতিটি ইউরিনিফেরাস নালিকা নেফ্রন, (Nephron) এবং সংগ্রাহক বা সংগ্রাহী নালিকা (Collecting tubule)-এই দু'টি প্রধান অংশে বিভন্ত। নেফ্রন মূত্র তৈরি করে আর সংগ্রাহী নালিকা রেনাল পেলভিসে মুত্র বহন করে।


নেফ্রন
বৃক্কের ইউরিনিফেরাস নালিকার ক্ষরণকারী অংশ এবং কাজ করার একককে নেফ্রন বলে। মানবদেহের প্রতিটি বৃক্কে প্রায় 10-12 লক্ষ নেফ্রন থাকে। প্রতিটি নেফ্রন একটি রেনাল করপাসল (Renal corpuscle) বা মালপিজিয়ান অঙ্গ এবং রেনাল টিউব্যুল (Renal tubule) নিয়ে গঠিত।
প্রতিটি রেনাল করপাসল আবার প্লোমেরুলাস (Glomerulus) এবং বোম্যান্স ক্যাপসুল- এ দুটি অংশে বিভত্ত্ব। বোম্যান্স ক্যাপসুল গ্লোমেরুলাসকে বেষ্টন করে থাকে।
বোম্যান্স ক্যাপসুল দুই স্তরবিশিষ্ট পেয়ালার মতো প্রসারিত একটি অংশ। গ্লোমেরুলাস একগুচ্ছ কৈশিক

চিত্র ৪.০৩: একটি নেফ্রন

জালিকা দিয়ে তৈরি। রেনাল ধমনি থেকে সৃষ্ট অ্যাফারেন্ট আর্টারিওল (Afferent arteriole) ক্যাপসুলের ভিতরে ঢুকে প্রায় 50টি কৈশিকনালিকা তৈরি করে। এগুলো আবার বিভক্ত হয়ে সূক্ষ্ম রন্দ্রজালিকার সৃষ্টি করে। এসব জালিকার কৈশিকনালিগুলো মিলিত হয়ে ইফারেন্ট অ্যার্টারিওল (Efferent arteriole) সৃষ্টি করে এবং ক্যাপসুল থেকে বেরিয়ে আসে।
প্লোমেরুলাস ছাঁকনির মতো কাজ করে রক্ত থেকে পরিসুত তরল উৎপন্ন করে। এই তরলকে বলে আল্ট্রাফিলট্রেট। সেই আল্ট্রাফিলট্রেট রেনাল টিউব্যুলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় আরও কয়েক দফা শোষণ এবং নিঃসরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। সবশেষে যে তরলটি পাওয়া যায়, সেটিই মূত্র, যা সংগ্রাহী নালিকার মধ্য দিয়ে ইউরেটার হয়ে মুত্রথলিতে জমা হতে থাকে।
বোম্যান্স ক্যাপসুলে অক্ষিয়দেশ থেকে সংগ্রাহী নালি পর্যন্ত বিস্তৃত চওড়া নালিকাটিকে রেনাল টিউব্যুল বলে। প্রতিটি রেনাল টিউব্যুল ওটি অংশে বিভক্ত, গোড়াদেশীয় বা নিকটবর্তী প্যাঁচানো নালিকা (Proximal convoluted tubule), হেনলি-র লুপ (Henle's loop) এবং প্রান্তীয় প্যাঁচানো নালিকা (Distal convoluted tubule)।

একক কাজ
কাজ: মানববৃক্ক এবং নেফ্রনের চিত্র অঙ্কন করে চিহ্নিত কর।

চিত্র ৪.04 নেফ্রনের কার্যপ্রণালি

বৃক্কের কাজ
একজন স্বাভাবিক মানুষ প্রতিদিন প্রায় 1500 মিলিলিটার মূত্র ত্যাগ করে। মুত্রে ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, অ্যামোনিয়া, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্যপদার্থ থাকে। এগুলো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এসব অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ মুত্রের মাধ্যমে অপসারণে বৃক্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বৃক্ক বা কিডনির ভিতরের নেফ্রন একটি জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে মূত্র উৎপন্ন করে। উৎপন্ন মূত্র সংগ্রাহী নালিকার মাধ্যমে বৃক্কের পেলভিসে পৌঁছায় এবং পেলভিস থেকে ইউরেটারের ফানেল আকৃতির প্রশস্ত অংশ বেয়ে ইউরেটারে প্রবেশ করে। ইউরেটার থেকে মূত্র মূত্রথলিতে আসে এবং সাময়িকভাবে জমা থাকে। মূত্র দিয়ে মুত্রথলি একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত পূর্ণ হলে মূত্র ত্যাগের ইচ্ছা জাগে এবং মূত্রথলির নিচের দিকে অবস্থিত ছিদ্রপথে মূত্রনালির মাধ্যমে দেহের বাইরে বেরিয়ে আসে। এভাবে বৃক্ক বা কিডনি মানবদেহ থেকে ক্ষতিকর নাইট্রোজেন জাতীয় পদার্থসহ বিভিন্ন বর্জ্য অপসারণ করে।
বৃক্ক মানবদেহে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড ইত্যাদির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়াও মানবদেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, পানি, অম্ল এবং ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে।

একক কাজ
কাজ: পরের পৃষ্ঠার ছকে বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনে কোন অঙ্গ কীভাবে অংশ নেয় তা লেখ।

বর্জ্য পদার্থঅঙ্গমন্তব্য

কার্বন ডাই-অক্সাইড নাইট্রোজেনঘটিত

বর্জ্য পদার্থ ইউরিয়া, ইউরিক এসিড

অতিরিক্ত পানি

অসমোরেগুলেশনে বৃক্কের ভূমিকা
ষষ্ঠ অধ্যায়ে অভিস্রবণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। বৈষম্যভেদ্য পর্দার এক পাশে যদি একটি দ্রবণ রাখা হয় এবং তার অপরপাশে থাকে শুধু ঐ দ্রবণের দ্রাবকটি (এক্ষেত্রে পানি) তাহলে বিশুদ্ধ দ্রাবকের দিক থেকে দ্রবণের মধ্যে অভিস্রবণ ঘটবে। দ্রবণের দিক থেকে চাপ প্রয়োগ করে সেই অভিস্রবণ বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব। এ জন্য সর্বনিম্ন যেটুকু চাপ প্রয়োগ করতে হয় সেটিই হলো ঐ দ্রবণের জন্য অভিস্রবণ চাপ। জীবদেহে পানি এবং লবণের পরিমাণ ও ঘনত্ব এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় যাতে সামগ্রিকভাবে দেহাভান্তারে অভিস্রবণ চাপ প্রায় অপরিবর্তিত থাকে। এই প্রক্রিয়াটির নাম অসমোরেগুলেশন বা পানি সাম্য।
যাবতীয় শারীরবৃত্তিক কাজ সম্পাদনের জন্য মানবদেহে পরিমিত পানি থাকা অপরিহার্য। মূলত মূত্রের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি পানি দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। দেহের পানিসাম্য নিয়ন্ত্রণে বৃক্ক প্রধান ভূমিকা পালন করে। বৃক্ক নেফ্রনের মাধমে পুনঃশোষণ প্রক্রিয়ায় দেহে পানির সমতা বজায় রাখে। গ্লোমেরুলাসে রেচন বর্জ্য, পানি এবং অন্যান্য তরল পদার্থ পরিসুত হয়। বৃক্ক অকার্যকর হয়ে গেলে দেহে পানি জমতে থাকে। চোখ-মুখসহ সারা শরীর ফুলে যেতে পারে, এমনকি উচ্চ রক্তচাপও সৃষ্টি হতে পারে। এগুলো প্রকৃতপক্ষে অসমোরেগুলেশন জনিত ত্রুটির লক্ষণ।


বৃক্কে পাথর
নানারকম রোগের কারণে বৃক্ক বা কিডনির স্বাভাবিক কাজে বিঘ্ন ঘটে। কিডনির প্রদাহ, প্রস্রাবে সমস্যা, কিডনিতে পাথর হওয়া এর মাঝে উল্লেখযোগ্য। কিডনির রোগের লক্ষণগুলো হলো শরীর ফুলে যাওয়া, প্রস্রাবে অতিরিক্ত প্রোটিন যাওয়া, রক্ত মিশ্রিত প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করা, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া বা ক্ষেত্রবিশেষে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া। মানুষের কিডনিতে ছোট আকারের পাথর জাতীয় পদার্থের সৃষ্টিই বৃদ্ধ বা কিডনির পাথর হিসেবে পরিচিত। কিডনিতে পাথর সবারই হতে পারে, তবে দেখা গেছে, মেয়েদের থেকে পুরুষের পাথর হওয়ার আশঙ্কা বেশি। অতিরিক্ত শারীরিক ওজন, কিডনির সংক্রমণ, কম পানি পান করা ইত্যাদি বৃক্ক বা কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ হতে পারে।
প্রাথমিকভাবে বৃক্কে পাথর হলে তেমন সমস্যা ধরা পড়ে না। সমস্যা হয় যখন পাথর প্রস্রাব নালিতে চলে আসে এবং প্রস্রাবে বাধা দেয়। উপসর্গ হিসেবে কোমরের পিছনে ব্যথা হবে। অনেকের প্রস্রাবের সাথে রক্ত বের হয়। অনেক সময় কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। বৃক্কের পাথরের চিকিৎসা নির্ভর করে পাথরের আকার এবং অবস্থানের উপর। সাধারণত অধিক পানি গ্রহণ এবং ঔষধ সেবনে পাথর অপসারণ করা যায়। আধুনিক পদ্ধতিতে ইউরেটারোস্কোপিক কিংবা আল্ট্রাসনিক লিথট্রিপসি অথবা বৃক্কে অস্ত্রোপচার করে পাথর অপসারণ করা যায়।

common.content_added_by

বৃক্ক বিকল, ডায়ালাইসিস ও প্রতিস্থাপন (8.3)

132
132

নেফ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনিতে পাথর ইত্যাদি কারণে কিডনি ধীরে ধীরে বিকল হয়ে যায়। আকস্মিক কিডনি অকেজো বা বিকল হওয়ার কারণগুলো হলো কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, মারাত্মক ডায়রিয়া, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ইত্যাদি।
কিডনি বিকল হলে মূত্রের পরিমাণ কমে যাবে। রস্তে ক্রিয়েটিনিন বৃদ্ধি পাবে। তখন রক্তের বর্জ্য দ্রব্যাদি অপসারণের জন্য নির্দিষ্ট সময় পর পর রোগীকে ডায়ালাইসিস করা হয়।


ডায়ালাইসিস (Dialysis)
বৃক্ক সম্পূর্ণ অকেজো বা বিকল হওয়ার পর বৈজ্ঞানিক উপায়ে রক্ত পরিশোধিত করার নাম ডায়ালাইসিস। সাধারণত 'ডায়ালাইসিস মেশিনের' সাহায্যে রক্ত পরিশোধিত করা হয়। এ মেশিনের ডায়ালাইসিস টিউবটির এক প্রান্ত রোগীর হাতের কব্জির ধমনির সাথে এবং অন্য প্রান্ত ঐ হাতের কব্জির শিরার সাথে সংযোজন করা হয়। ধমনি থেকে রক্ত ডায়ালাইসিস টিউবের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করানো হয়। এর প্রাচীর আংশিক বৈষম্যভেদ্য হওয়ায় ইউরিয়া, ইউরিক এসিড এবং অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ বাইরে বেরিয়ে আসে। পরিশোধিত রক্ত রোগীর দেহের শিরার মধ্য দিয়ে দেহের ভিতর পুনরায় প্রবেশ করে। এখানে উল্লেখ্য, ডায়ালাইসিস টিউবটি এমন একটি তরলের মধ্যে ডুবানো থাকে, যার গঠন রঙের প্লাজমার

চিত্র ৪.05: ডায়ালাইসিস

অনুরূপ হয়। এভাবে ডায়ালাইসিস মেশিনের সাহায্যে নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ (ইউরিয়া এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ) বাইরে নিষ্কাশিত হয়। তবে এটি একটি ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া।


প্রতিস্থাপন
যখন কোনো ব্যক্তির কিডনি বিকল বা অকেজো হয়ে পড়ে তখন কোনো সুস্থ ব্যক্তির কিডনি তার দেহে প্রতিস্থাপন করা যায়, তাকে কিডনি সংযোজন বলে। কিডনি সংযোজন দুভাবে করা যায়: কোনো নিকট আত্মীয়ের কিডনি অথবা কোনো মৃত ব্যক্তির কিডনি রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা যায়। নিকট আত্মীয় বলতে বাবা, মা, ভাইবোন, মামা, খালাকে বোঝায়। মৃত ব্যক্তি বলতে 'ব্রেন ডেড' মানুষকে বোঝায়, যাঁর আর কখনোই জ্ঞান ফিরবে না কিন্তু তাঁর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কৃত্রিমভাবে জীবিত রাখা হয়েছে। মরণোত্তর চক্ষুদানের মতো মরণোত্তর বৃক্ক দানের মাধ্যমে একজন কিডনি বিকল রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভবপর হতে পারে। মরণোত্তর সুস্থ কিডনি দানে মানবজাতির উপকার করা যায়।
পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ কিডনি অকেজো রোগী কিডনি সংযোজনের মাধ্যমে সুস্থ জীবন যাপন করছে। আমাদের দেশেও কিডনি সংযোজন কার্যক্রম সাফল্যের সাথে করা হচ্ছে। তবে আমাদের দেশে আইনগত জটিলতার কারণে রক্তের সম্পর্ক না থাকলে রোগীকে কিডনি দান করা যায় না, এজন্য অনেক সময় রোগী জরুরি কিডনি প্রতিস্থাপন থেকে বঞ্চিত হন। একটি কিডনি কার্যক্ষম থাকলেই সেটি দিয়ে জীবনধারণ করা সম্ভব, তাই একটি সুস্থ কিডনি প্রতিস্থাপন করে রোগের চিকিৎসা করা যায়। তবে দেখতে হবে যে টিস্যু ম্যাচ করে কি না। পিতামাতা, ভাইবোন এবং নিকট আত্মীয়ের কিডনির টিস্যু ম্যাচ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে, দৈনিক অপর্যাপ্ত পানি পান করলে এবং অন্যান্য নানা কারণে মূত্রনালির রোগ দেখা দেয়। মূত্রনালির সংক্রমণ হলে মূত্রনালি জ্বালাপোড়াসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। ডাক্তারের সত্বর পরামর্শ এবং চিকিৎসা গ্রহণে অনেক ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। আগে ধারণা করা হতো, সবার দৈনিক আট গ্লাস পানি পান করা উচিত। তবে আধুনিক গবেষণায় দেখা যায়, পানি পানের স্বাভাবিক মাত্রা ব্যক্তি, লিঙ্গ, কাজের ধরন, শারীরিক অসুস্থতার প্রকৃতি এবং আবহাওয়া ভেদে ভিন্ন হতে পারে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি পান করা ঠিক নয়। তাই পিপাসা পেলেই পানি পান করা উচিত।


সতর্কতা
অনেকে ডায়রিয়া বা বমি হওয়া ছাড়াই গরমে ঘেমে গেলে, ক্লান্ত অবস্থায় কিংবা তেমন কোনো কারণ ছাড়াই খাবার স্যালাইন পান করে থাকেন। এটি একেবারেই ঠিক নয়, বিশেষ করে বয়স্ক মানুষের বেলায় ডায়রিয়া বা বমি ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খাবার স্যালাইন বিপদ ডেকে আনতে পারে। এমনকি ডায়রিয়া বা বমি হলেও তাঁদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক সঠিক পরিমাণে স্যালাইন দিতে হবে। সাধারণ ক্লান্তি বা ঘামের ক্ষেত্রে লেবুর রস এবং সামান্য লবণমিশ্রিত শরবতই যথেষ্ট। ডায়াবেটিস না থাকলে এতে কিছুটা চিনিও যোগ করা যেতে পারে।

একক কাজ
কাজ: মরণোত্তর বৃক্কদানের বিষয়ে পোস্টার অঙ্কন করে শ্রেণিতে উপস্থাপন কর।


মূত্রনালি সুদ্ধ রাখার উপায়
শিশুদের টনসিল এবং খোসপাঁচড়া থেকে সাবধান হওয়া প্রয়োজন; কেননা সেখান থেকে কিডনির অসুখ হতে পারে। ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। ডায়রিয়া ও রক্তক্ষরণ ইত্যাদির দ্রুত চিকিৎসা করতে হবে। ধূমপান ত্যাগ করা এবং ব্যথা নিরাময়ের ঔষধ যথাসম্ভব পরিহার করা প্রয়োজন। পরিমাণমতো পানি পান করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, নিয়ম মেনে জীবন যাপন করতে হবে।


একক কাজ
কাজ: কীভাবে বৃক্ক ও মূত্রনালির সুস্থতা রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে দলগতভাবে লিফলেট তৈরি কর।

common.content_added_by

অনুশীলনী

117
117

সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
১. ডায়ালাইসিস কী?
২. মালপিজিয়ান অঙ্গ কাকে বলে?
৩. পেলভিস কাকে বলে?
৪. রেচন পদার্থ বলতে কী বোঝায়?
৫. বৃক্কে পাথর বলতে কী বোঝায়?

রচনামূলক প্রশ্ন
১. সূত্রনালি সুস্থ রাখার উপায়গুলো ব্যাখ্যা কর।



বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. ইউরিয়া কোথায় ভৈরি হয়?
ক. বৃক্কে
খ. যকৃতে
গ. দেহকোষে
ঘ. রেনাল ধমনিতে
২. বৃক্কে পাথর হওয়ার আশঙ্কা কমে-
i. শারীরিক ওজন হ্রাস পেলে
11. কম পানি পান করলে
iii. সস্বল্প পরিমাণ আমিষ খেলে।
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
উদ্দীপকটি পড়ে ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও।
তান্নি পানি ও অন্যান্য খাদ্য গ্রহণে নিয়মনীতি মেনে চলে না। ইদানীং তার মুত্রের পরিমাণ কম হওয়াসহ কোমরের পিছনে ব্যথা হচ্ছে।
৩. তাগির দেহে উক্ত উপাদানটি কম হওয়ার কারণ-

i।ঘাম বেশি হওয়া
ii. ফল কম খাওয়া
iii. লবণান্ত খাদ্য গ্রহণ।
নিচের কোনটি সঠিক?
(ক)। ও il
(খ) i ও iil
(গ) ii ও iii
(ঘ) i, ii
৪. ভাগ্নির শরীরের উন্ত সমস্যার কারণ-

i।শরীরে পানি আসা
ii. মূত্রনালির প্রদাহ
iii. প্রস্রাবের সাথে শর্করা যাওয়া

  1. (ক)। ও il
    (খ) i ও iil
    (গ) ii ও iii
    (ঘ) i, ii,iii

সৃজনশীল প্রশ্ন


ক. মেডুলা কী?
খ. গ্লোমেরুলাস বলতে কী বোঝায়?
প. চিত্র A কে ছাঁকনির সাথে তুলনা করা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. চিত্র এ বিকল হলে কীভাবে এর প্রতিরোধ-ব্যবস্থা গ্রহণ করবে মতামত দাও।

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion